বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে ক্রিকেটের বীজ রোপিত হয়। ৫১ বছর পর দলটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক দূর এগিয়েছে। গত ১৫ বছরে দলটি তরুণ ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের উপর নির্ভর করেছে, যার ফলে সীমিত ওভারের ফরম্যাটে ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছে। আইসিসি ইভেন্টগুলোতে তারা সাহসী ক্রিকেট খেলে শীর্ষ টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর বিপক্ষে চমক দেখিয়েছে।
আরও পড়ুন:
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই দশ বাংলাদেশি ক্রিকেটারের তালিকা যারা নিজেদের দলের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন :
10. তামিম ইকবাল
তামিম ইকবাল গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন। তিনি ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক করেন এবং পরের মাসেই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো অর্ধশতক হাঁকিয়ে সবার নজর কাড়েন।
তামিমের এই অসাধারণ পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয়। গত ১৫ বছরে তামিম বাংলাদেশের সমর্থকদের অসংখ্য দারুণ ইনিংস উপহার দিয়েছেন। তার শক্তিশালী শুরুর উপর ভর করে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ জিতেছে।
২০২২ সালের আগস্টে তামিম টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নিলেও ওয়ানডে ও টেস্টে খেলা চালিয়ে যাবেন। তার অভিজ্ঞতার সঙ্গে খেললে তরুণরা উপকৃত হবে, কারণ তার বিশাল ক্রিকেট জ্ঞান তাদের খেলাকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।
9. আব্দুর রাজ্জাক
আব্দুর রাজ্জাক ১৪ বছর ধরে পেশাদার ক্রিকেট খেলেছেন, সেই সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন।
মোহাম্মদ রফিকের অবসরের পর রাজ্জাক স্পিন বিভাগকে নেতৃত্ব দেন। ২০১৩ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট শিকার করেন। ২০০৭ ও ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ে তার উইকেট নেওয়া ও মিতব্যয়ী বোলিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ে রাজ্জাক তার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সাতটি উইকেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি ২০২১ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন।
8. মোহাম্মদ রফিক
মোহাম্মদ রফিক তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৯৫ সালে। সেই সময়ে বাংলাদেশকে গড়পড়তা দল হিসেবে গণ্য করা হতো, কিন্তু ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে পরিস্থিতি বদলে যায়। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ বিশ্বকে চমকে দেয় তারকাখচিত পাকিস্তান দলকে হারিয়ে।
ওই ম্যাচে রফিক তার স্পিন বোলিংয়ে এক উইকেট নেন এবং মাত্র ২৮ রান দেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে তার সেরা পারফরম্যান্স আসে, যখন তিনি মাশরাফি মোর্তাজা এবং আব্দুর রাজ্জাককে সহায়তা করে ভারতকে মাত্র ১৯১ রানে অলআউট করতে ভূমিকা রাখেন।
তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে তিনি সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড় এবং মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটারদের আউট করেন। সেই বিখ্যাত বিশ্বকাপ জয়ের পর, রফিক ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে শেষ টেস্ট সিরিজ খেলে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।
7. হাবিবুল বাশার
২০০৪ সালে হাবিবুল বাশার বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে জয় এনে দিয়ে দলের চেহারা পাল্টে দেন।
তিন বছর অধিনায়কত্ব করার পর, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে (৫০ ওভার) তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তাদের সেরা পারফরম্যান্স দেয়। গ্রুপ পর্বে ভারতকে হারিয়ে পরের পর্বে উঠে যায়। সুপার ৮ পর্বে, বাংলাদেশ আবারও সবাইকে চমকে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারায়।
২০০৭ সালে, ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজ খেলে বাশার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তার সময়ে বাংলাদেশ একটি সত্যিকারের ক্রিকেট জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে।
6. রুবেল হোসেন
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ অনেক প্রতিভা উত্পাদন করেছে, যার মধ্যে রুবেল হোসেন অন্যতম। ডানহাতি এই বোলার ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেক করেন এবং কয়েক বছরের মধ্যেই ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স দিয়ে দলের অন্যতম প্রধান বোলার হয়ে ওঠেন।
২০১৬ সাল পর্যন্ত রুবেলের উপর বাংলাদেশ বিশেষভাবে নির্ভর করত, বিশেষ করে দলের প্রধান বোলার মাশরাফি মোর্তাজার সঙ্গে মিলে শুরুতেই উইকেট নেওয়ার জন্য। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রুবেল তার দক্ষতা প্রমাণ করেন।
দ্বিতীয় ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে রুবেল তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বাংলাদেশকে ১৫ রানে জয় এনে দেন। অ্যাডিলেড ওভালে, তার (৯.৩-০-৫৩-৪) বোলিং স্পেলে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ ধ্বংস হয়। এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয়।
5. মোহাম্মদ আশরাফুল
মোহাম্মদ আশরাফুলকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার ম্যাচ জেতানো ওডিআই সেঞ্চুরির পর তিনি দেশে পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন।
২০০৭ সালে তিনি দলের জন্য কয়েকটি স্মরণীয় ইনিংসও খেলেন। সেই বছরের বিশ্বকাপের সুপার ৮ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আশরাফুলের ৮৭ রানের শক্তিশালী ইনিংসের সাহায্যে বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে।
একই বছরে, ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আশরাফুলের ৬১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশকে জয় এনে দেয়। এই জয়ে বাংলাদেশ সুপার ৮ পর্বে জায়গা করে নেয়।
4. মুশফিকুর রহিম
মুশফিকুর রহিম গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন এবং এই সময়ে তার দারুণ ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে নিজেকে মিডল অর্ডারে প্রমাণ করেছেন। নির্ভরযোগ্য ব্যাটিং পারফরম্যান্সের কারণে তিনি “মিস্টার ডিপেন্ডেবল” উপাধি অর্জন করেছেন।
রহিম, যিনি দলের অন্যতম প্রধান ব্যাটসম্যান, বাংলাদেশের ক্রিকেট মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় তিনি তার ব্যাট দিয়ে অসাধারণ ইনিংস খেলে ভক্তদের মুগ্ধ করেছেন।
২০০৭ এবং ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার স্মরণীয় ইনিংসগুলো এখনও বাংলাদেশের ভক্তদের হৃদয়ে জীবন্ত। ৩৫ বছর বয়সী মুশফিক তার অসাধারণ খেলায় বাংলাদেশি সমর্থকদের কাছ থেকে অনেক সম্মান ও ভালোবাসা অর্জন করেছেন।
3. মোস্তাফিজুর রহমান
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে ঝড় তোলেন। ২০১৫ সালে ভারতের বাংলাদেশ সফরে মুস্তাফিজ তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজে ১৩টি উইকেট তুলে নেন, যা বাংলাদেশের জন্য এক অবর্ণনীয় সাফল্য।
তার আগমনের সাথে সাথেই বাংলাদেশ তাদের অন্যতম সেরা মুহূর্ত অর্জন করে, প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ জেতে। সেই সিরিজের পর থেকে মুস্তাফিজুর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। সীমিত ওভারের ফরম্যাটে তিনি তার মিতব্যয়ী বোলিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য ধারাবাহিকভাবে চমৎকার ফলাফল এনে দিয়েছেন।
গত সাত বছরে তিনি দলের জন্য নির্ভরযোগ্য পারফর্মার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন, যা তাকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আদর্শ রোল মডেল করে তুলেছে।
2. মাশরাফি বিন মর্তুজা
মাশরাফি মোর্তাজা ১৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। এই সময়ে, তার পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি নিজেকে বিশাল এক ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বছরের পর বছর ধরে তার মিতব্যয়ী বোলিংয়ের মাধ্যমে তিনি দলের বোলিং ইউনিটকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
মাশরাফি অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন, এবং তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১৫ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ, ২০১৬ এশিয়া কাপ এবং ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বহু-জাতীয় টুর্নামেন্টে অসাধারণ সাফল্য দেখেছে।
এই প্রতিযোগিতাগুলোতে বাংলাদেশ শীর্ষ দলগুলোর বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। তার অবদানের জন্য মাশরাফি বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন।
1. সাকিব আল হাসান
শাকিব আল হাসানের দলে অন্তর্ভুক্তির পর বাংলাদেশ ক্রিকেটের মান অসাধারণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অলরাউন্ডার ব্যাট, বল এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
২০০৯ সালে, তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে তিনি মোর্তাজার অনুপস্থিতিতে অধিনায়ক হিসেবে দলে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। শাকিব দলটির দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট এবং ওডিআইতে পরাজিত করে তার শক্তি প্রদর্শন করেন।
দেশে তিনি তার অসাধারণ ক্রিকেট ক্যারিয়ারের জন্য একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য veteran cricketer এর অবদান কখনো ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।